Anuradha Gandhy:The woman who never falls back

।।অনুরাধা গাঁধি ।।


বর্তমানে একটি কথা খুব প্রচলিত হয়ে উঠেছে: সিউডো ফেমিনিসম। মনে করা হয় মহিলারা শুধুমাত্র নিজেদের সুবিধার জন্য ফেমিনিসমকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। কিন্তু এরকম নারীর উদাহরণও রয়েছে যাঁরা নারীবাদকে একটা আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। শুধু নিজের স্বাধীনতা বা মুক্তির কথা না ভেবে তিনি ভেবেছেন আরও শতাধিক মহিলার কথা যাঁরা সমাজের মূলস্রোত থেকে নির্মমভাবে বঞ্চিত। অনুরাধা শানবাগ ওরফে গান্ধী ভারতীয় নারীবাদের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম যা চিরকাল মেঘের আড়াল থেকেই প্রজ্জ্বলিত হয়েছেন এবং আলো দেখিয়েছেন আরও কিছু অবহেলিত তারার গায়ে।
একটি আদ্যোপান্ত মার্ক্সবাদী চিন্তাধারার মধ্যে বেড়ে ওঠা অনুরাধা অথবা অনুর মেয়েবেলা তৎকালীন আর পাঁচটা মেয়েদের থেকে একটু আলাদাই ছিল। পিতা মুম্বাই হাইকোর্ট এর লইয়ার আর মা অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির নিয়মিত সদস্য হওয়ার দরুন ছোটোবেলা থেকেই নতুনের প্রতি আসক্তি, বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশুনা এবং তার বিশদ আলোচনার মধ্যে দিয়েই হয়েছে তাঁর বেড়ে ওঠা। মার্ক্সবাদ তিনি রপ্ত করেন মুম্বাই এর এলফিন্সটোন কলেজে পড়ার সময় থেকে। ১৯৭২-এ মহারাষ্ট্রের গ্রামাঞ্চলের দুর্ভিক্ষের বীভৎস রূপ তাঁকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। কলেজ পড়ুয়া অনুরাধা অবাক হয়েছিলেন সেই না খেতে পাওয়া নিদারুণ কষ্টে থাকা মানুষগুলোর বেঁচে থাকার লড়াই দেখে। তার পর থেকে আর ফিরে তাকাননি। নক্সালবাড়ি মুভমেন্টের সাথে যুক্ত থাকাকালীনও তিনি মানুষের পাশে থেকেছেন, মহিলাদের পাশে থেকেছেন। সাথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন তাঁর কলেজে শিক্ষকতাও। ১৯৭৭ সালে তিনি বিয়ে করেন তাঁরই কমরেড কোবাড গান্ধিকে।
বিপ্লব আর পরিবর্তনের মশালটা জ্বালিয়ে রাখতে সোসিওলজিতে পিএচডি আনুরাধা, লহমায় ছেড়েছেন মুম্বাইয়ের বিলাসবহুল আপার ক্লাস এলিট জীবন। পৌঁছে গিয়েছিলেন নাগপুরের এক প্রত্যন্ত গ্রামে যেখানে মহিলাদের সভ্যতা আর মানবিকতার বাইরেই রাখা হত। তিনি দালিতদের বস্তিতে কাজ করে গেছেন দিনের পর দিন। ১৯৭৪-এর দলিত প্যান্থার মুভমেন্টের অন্যতম মুখ ছিলেন অনুরাধা। দলিতদের মধ্যে মহিলাদের অপর মধ্যযুগীয় পেষণের মুক্তির জন্য তিনি বিশেষ ক্লাস চালু করেছিলেন। অনুরাধা ছিলেন একাধারে দক্ষ লেখিকা যিনি তাঁর বিপ্লবের ভাষাকে বইয়ের পাতায় তুলে এনেছিলেন। ইংরেজী, হিন্দী আর মারাঠি ভাষায় পত্রিকা ‘কলম’ এবং ‘জন সংগ্রাম’-এ বহিঃপ্রকাশ ঘটে তাঁর মুক্ত চিন্তাধারার। পুলিশ বহুবার তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে, আর জীবনের অধিকাংশ সময় অজ্ঞাতসারে কাটিয়ে দেন।
দুর্দান্ত কিছু ঘটনার মধ্যে দিয়ে কেটেছে তাঁর জীবন। অনুরাধা, ১৯৯২-এ নাগপুরের বাল্লাদির গাদার-এর এক বক্তৃতার অনুষ্ঠান করার অনুমতি হাইকোর্ট থেকে করানোর পরেও স্থানীয় পুলিশ আটকে দেয় প্রধান বক্তাকে। বহু সংখ্যক ছাত্র, অধ্যাপক আর শ্রোতার উপস্থিতি ভয় পাইয়েছিল সেই সময়ের পুলিশ ও শাসক দলকে। শেষপর্যন্ত অনুরাধাই ছদ্মবেশে গাদারকে নিয়ে আসেন জনতার সম্মুখে। সতীর্থদের উল্লাস আর হাততালিতে ফেটে পড়ে চারদিক। হ্যাঁ, সেইদিন আর কোনও সভা করতে দেওয়া হয়নি ঠিকই; কিন্তু পরবর্তী ২ মাস সংবাদপত্রের শিরোনামে ঘটনাটি জায়গা করে নেয়। ৫৪ বছর বয়সী এই অসমসাহসী দলনেত্রী ম্যালেরিয়ায় মারা যাওয়ার আগের সপ্তাহেও আদিবাসী মহিলাদের ক্লাস নিয়েছিলেন। মনে করা হয় তিনি বস্তারের জঙ্গলে থাকাকালীনই জ্বরে আক্রান্ত হন। ভারতবর্ষের ছাত্র আন্দোলনের এক প্রধান মুখ ছিলেন তিনি। তাঁর গর্জে ওঠার ভাষাকে সম্বল করে এখনও লড়ে চলেছে কিছু নিঃস্বার্থ মানুষ সেই অসহায় মুখগুলোয় হাসি ফোটাবার উদ্দেশ্যে।

Comments