Mumbai Train Blast 7/11

|| মুম্বাই ট্রেন হামলা ২০০৬ ||


২০০৬ সালের ১১ই জুলাই দেশের অর্থনীতির রাজধানী মুম্বাই দেখেছিল এক ভয়ানক দুর্ঘটনা যা নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশ তথা পৃথিবীর মানুষকে। সভ্যতা ও মনুষ্যত্বের নিয়মনীতিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে একটি সন্ধ্যের ১১ মিনিট কেড়ে নিয়েছিল বহু মানুষের প্রাণ।

মুম্বাইয়ের ট্রেন চলাচল ব্যবস্থা হল মুম্বাইয়ের লাইফলাইন যা গোটা শহরে শিরা উপশিরার মত ছড়িয়ে রয়েছে। দুর্মূল্যের এই নগরীতে ছাপোষা মানুষগুলোর যাওয়া আসার এক অন্যতম উপায় এই রেলপথ। স্বাভাবিকভাবেই ট্রেনগুলিতে এক একদিনে প্রায় ৬ লাখ মানুষের যাতায়াত। সন্ধ্যের মুম্বাই রেলস্টেশনের ছবি, বলা ভালো দাদার, মাতুঙ্গা রোড, মাহিম জংশন, বান্দ্রা, খার রোড, সান্তাক্রুজ, যোগেশ্বরী, মালাড়, বরিভেলি, মীরা রোড স্টেশনের ঘটনা। ঘড়িতে তখন ৬টা বা ৬.৩০-এর কাছাকাছি। কর্মক্ষেত্রে একটি ব্যস্ততম দিন কাটিয়ে বহু সাধারণ মানুষ বাড়ি ফিরছে। প্ল্যাটফর্ম বা ট্রেনের কামরার কোথাও তিলধারণের জায়গা নেই। প্রাভীন পারেইরা, ৩৩ বছর বয়সী একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের কথায় হঠাৎ প্রচণ্ড এক ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে গেলো ট্রেনটা। গাড়িটি তখন বরিভেলি স্টেশনে দাঁড়িয়ে। বিকট একটা শব্দ আর ধোঁয়ায় ভরে গেছে গোটা স্টেশন। মানুষের চিৎকার, প্রাণভয়ের দৌড়, প্ল্যাটফর্ম আর রেললাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মৃতদেহ পাশ কাটিয়ে এগিয়ে চলেছে দলে দলে অসহায় মানুষ। মধ্যবয়স্কা আর্টি জ্যাকিন্টো ছিলেন অন্য একটি ট্রেনে। সাংবাদিকদের তিনি ফোনে বলেন মাতুঙ্গা রোড স্টেশনে ট্রেন থামার পরেই তিনি শুনতে পান বিস্ফোরণের শব্দ। চারপাশের ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যেই তিনি বাইরে লাফ দেন। জ্ঞান ফেরার পর তিনি প্রথম অনুভব করেন এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যাক্তি পাশে পড়ে থাকা গুরুতর জখম একজনের মাথায় জল ঢালছে। শুধু রেল যাত্রী নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন রেলট্র্যাকের পাশে বসবাসকারী বহু গরিব মানুষ। মৃতের সংখ্যা প্রায় ২০০ আর জখম হয়েছেন প্রায় ৭০০-রও বেশি মানুষ। কিছু ক্ষতিগ্রস্থের অবস্থা এত ভয়ানক ছিল যে তাদের শনাক্ত করাই মুশকিল হয়ে ওঠে। ঘটনার মিল পাওয়া যায় ২০০৪-এর মাদ্রিদ আর ২০০৫-এর লন্ডন ট্রেন বম্বিং-এর সাথে।

মুম্বাই-এর ট্রেন হামলার বিষয়টি ঘিরে মামলা চলে প্রায় ৮ বছর। বহু চাঞ্চল্যকর তথ্যও উঠে আসে। ৭টি আর ডি এক্স বম্ব প্রেশার কুকারে ভরে রাখা হয় সাতটি আলাদা আলাদা ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে। বেছে নেওয়া হয় দিনের ঠিক সেই সময়টা যখন ট্রেনে বা স্টেশনে ভিড় থাকে সর্বোচ্চ। মূল ঘটনায় অভিযুক্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৯২ জন ব্যক্তির সাক্ষ্যপ্রমাণ নেয় আদালত এবং বিচারপতি যাতীন ডি শিণ্ডে ১২ জন দোষীর ফাঁসীর রায় ঘোষণা করেন। দোষীদের সাথে পাকিস্তানের লস্কর-ই-তইবার সরাসরি যোগসূত্র পাওয়া গেলেও পাকিস্তান সরকার তার দায় ঝেড়ে ফেলে অনায়াসেই।

জঙ্গী হামলা মুম্বাইতে নতুন নয়। দেশের অর্থনৈতিক রাজধানী, যে শহর নাকি কখনো ঘুমোয় না, সেই শহরেই বার বার মানুষ জর্জরিত হয়েছে সন্ত্রাসবাদী হামলায়। ১৯৯৩ সালে মার্চ মাসে মুম্বাই-এর বিভিন্ন প্রান্তে পরপর ১৩টি বিস্ফোরণ ঘটে যার প্রথমটি ঘটে স্টক এক্সচেঞ্জে। প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে চলে এই তাণ্ডবলীলা। এই ঘটনায় মারা যায় প্রায় ২৫০ জনের বেশি মানুষ, হতাহতের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। ২০০৮-এর তাজ হোটেলের অ্যাটাক সেই স্মৃতি আরও উস্কে দেয়। টানা ৪ দিন ধরে চলেছিল সেই মৃত্যুমিছিল।

শুধু ভারতবর্ষ নয়, এই গোটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন সময়ে দেখেছে চাপ চাপ রক্ত, নিরীহ মানুষের কান্না, আর্ত চিৎকার। তারা দিনের পর দিন নিঃশ্বাস নিয়েছে বারুদের গন্ধ মাখানো বাতাসেই। তবুও কবি বলেন,
"পৃথিবীর কালো সাদা হলুদ মানুষের গান,
তাদের স্বপ্ন এক মুহূর্ত সেই চিৎকার শুনে থমকে তাকায়,
তারপর যার যেদিকে রাস্তা সে সামনে আরো সামনের দিকে এগিয়ে যায়..."
https://www.facebook.com/parallel.void/


Comments