Edward Snowden:The whistle blower

|| এডওয়ার্ড স্নোডেন ||



'Whistle-blower' শব্দটি ব্যবহৃত হয় তাঁর ক্ষেত্রে যিনি কোনো প্রতিষ্ঠানে ঘটে চলা দুর্নীতির ঘটনাগুলো সাধারণের সামনে নিয়ে আসেন। এডওয়ার্ড জোসেফ স্নোডেন, ৩১ বছর বয়সী মিষ্টভাষী এক যুবক, কর্মক্ষেত্রে তুখোড়, বুদ্ধিদীপ্ত এবং প্রতিষ্ঠিত। তিনি চাকরিজীবন শুরু করেন Dell থেকে, তারপর আমেরিকার NSA (ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি), CIA (সিভিলিয়ানস ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি)-এ কাজ করে চলেন দক্ষতার সাথে। সরকারের হয়ে কাজ করা কালীন তিনি বেশ কিছু আন্তর্জাতিক তথ্যের মুখোমুখি হোন যা তাঁর মতে জনসমক্ষে আসা প্রয়োজন। স্বাভাবিক ভাবে এই কারণবশতই এডওয়ার্ড তাঁর আত্মজীবনী 'Permanent Record'-এ নিজেকে whistle-blower হিসেবেই পরিচয় দেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার তাঁকে দেশদ্রোহী, বিশ্বাসঘাতক হিসেবে দাগিয়েছেন। কারণ? তিনি পৃথিবীর অন্যতম ধনী ও শক্তিধর দেশ আমেরিকার অজস্র গোপনীয় তথ্য ফাঁস করে দেন সাংবাদিক Glenn Greenwald এবং Laura Poitras এর কাছে। NSA আর নিজের পরিবারকে ছেড়ে রওনা দেন হংকং-এ, সেইখানেই একটি বিলাসবহুল হোটেলে ২ জন সাংবাদিকের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তুলে ধরেন প্রায় ১.৭ মিলিয়ন U.S ন্যাশনাল সিক্রেট তথ্যাদি। ২০১৩ সালে The Guardian পত্রিকায় তাঁর বক্তব্য প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পরে আমেরিকান সরকার তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি চুরি ও Espionage Act 1917 (বিদেশী শক্তির বা দেশের মধ্যেকার কোনো আক্রমণ বা বিদ্রোহ আটকানোর জন্য কোনো দেশবাসীকে রাষ্ট্রেদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করা) অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত করে যার শাস্তি অন্ততপক্ষে ১০ বছরের জেল।
এখন প্রশ্ন হল এমন কী তথ্য তিনি প্রকাশ করেছেন যে তাঁকে এক নিমেষে রাষ্ট্রবিমুখ ঘোষণা করা হল? আমেরিকান সরকার ও U.K, ইসরাইল ও জার্মান গুপ্তচর সংগঠন মিলে অনৈতিকভাবে দেশের ও দেশের বাইরের মানুষের ওপর প্রতিনিয়ত নজরদারি চালিয়ে চলেছে। যার জন্যে সাধারণ মানুষের ইমেইল, মোবাইল ডেটা, সোশ্যাল মিডিয়াতে নজরদারি অবধি করে থাকে সরকার। ইরাক বা আফগানিস্তানে হওয়া যেকোনো কলরেকর্ড এবং ভয়েস recognition এর ব্যবস্থা, আমেরিকান প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশনে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেটওয়ার্ক হ্যাক সরকারের রাখঢাকের মধ্যে দিয়েই এগিয়ে চলে। স্নোডেন এটাও জানিয়েছেন আমেরিকান সরকার সাইবার যুদ্ধের ব্যাপারে GDP-র বেশ ভারী অংশ খরচে রাখে। অন্যদিকে U. K সরকার যে বেআইনি নজরদারিতে বিশেষ পিছিয়ে নেই সেটাও জানা যায় U.K পার্লামেন্ট সদস্যদের মেইল সংগ্রহ, ইসরায়েলি ড্রোনগুলির ওপর নজর রাখার তথ্য যখন সামনে আসে। প্রতিনিয়ত দেশের অনলাইন transaction, কল বিশেষ ভাবে সংগ্রহ করে রাখে সরকার রাজনৈতিক নেতাদের পূর্ণ সহযোগিতায়; যা পরবর্তীকালে ভোটের সময়ে কোনো বিশেষ দলের কাজে আসে। একটি ইন্টারভিউতে স্নোডেন বলেন, "আমি একজন সাধারণ মানুষ যে প্রতিদিন অফিস যায়, নিজের কাজ করে আর দেখতে হয় যে দেশের ভিতরে কি ঘটে চলেছে। এইটা সাধারণ মানুষের বিবেচনা করা উচিত যে দেশে কী প্রোগ্রাম বা পলিসি চলবে।" স্নোডেনের এই তথ্যে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয় সরকার। বিশেষ ভাবে তদন্ত শুরু হয়। সেই বছরই প্রেসিডেন্ট ওবামা ইন্টেলিজেন্স সারভিলেন্সে-এর স্বচ্ছতা দাবী করেন। ইউরোপিয়ান কোর্ট ও হিউম্যান রাইটস এর তরফ থেকে U. S ও U. K-এর বিরুদ্ধে আইনানুগ অভিযোগ আনা হয় ব্যক্তিগত তথ্য চুরির।
স্নোডেন বর্তমানে রাশিয়ায় পলিটিক্যাল অ্যাসাইলামে রয়েছেন। নিজের দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েও তিনি প্রায় ২০ খানা দেশ থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছেন। তাঁর সাহস ও চারিত্রিক দৃঢ়তা বারবার উদ্বুদ্ধ করে চলে যুবশক্তিকে।

Comments