|| প্রণয় রায় ||



বর্তমান ভারতে সাংবাদিক বা সাংবাদিকতা প্রসঙ্গ উঠলে আজকাল হাস্যকৌতুক ছাড়া কিছুই মনে পড়ে না। কিছু সাংবাদিকের অসাধারণ সব কাণ্ড নিয়ে একের পর এক মিম স্ক্রল করতে থাকি। আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি, আমাদের গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ প্রতিনিধিদের প্রকৃত অবস্থান। অথচ একটা সময়ে কিছু মানুষ ভারতবর্ষে সাংবাদিকতার মাইলস্টোন পুঁতে দিয়ে ছিলেন। প্রণয় রয় তাঁদের মধ্যেই একজন। প্রণয়লাল রায় একাধারে সাংবাদিক, অর্থনীতিবীদ এবং একজন চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট। এই বিশেষ প্রতিভাবান মানুষটি তৈরি করেন নিউ দিল্লি টেলিভিশন যা এনডিটিভি নামেই বিশেষভাবে পরিচিত।
প্রণয় রায় ১৯৪৯ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা পি এল (হারিকেন) রায় ছিলেন ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ার অর্থ সংগ্রাহক। মা আইরিশ হওয়ার দরুণ ছোটবেলা থেকেই তিনি মিশ্র সংস্কৃতিতে বড় হন। কলকাতার লা মার্টিনিয়ার স্কুল থেকে তাঁর পড়াশোনার যাত্রাপথ শুরু হয়। এছাড়াও দেরাদুনের দ্যা দুন স্কুলেও তিনি লেখাপড়া শেখেন। এরপর তিনি ইউরোপের দুটি ইনস্টিটিউশন থেকে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং দিল্লির স্কুল অফ ইকোনমিক্স থেকে ডক্টরেট প্রাপ্ত হন।
এই অসাধারণ প্রতিভাবান ব্যক্তির কাজের পরিধি অগাধ। তিনি ভারতের প্রাইস ওয়াটার হাউসে বিশেষ পরামর্শদাতা ছিলেন। একে একে তিনি ভারতীয় সাংবাদিকতায় নিজের প্রভাব বিস্তার করেন। তার সাথে তিনি একজন ব্রিটিশ চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট এবং অর্থনীতিবীদ হিসেবে নিজের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। রায় তাঁর পেশাদার জীবনের শুরুর দিকে নির্বাচনী বিশ্লেষণ এবং বাজেট সংক্রান্ত খবর দূরদর্শন, বিবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজ বা কোয়েশ্চেন টাইম ইণ্ডিয়া প্রভৃতি চ্যানেলে পরিচালনা করতেন। ১৯৮৮ সালে প্রণয় রায় ও তাঁর সাংবাদিক স্ত্রী উপস্থাপন করেন নিউ দিল্লি টেলিভিশন। প্রণয় রায় প্রথম চালু করেন ভারতবর্ষের সম্পূর্ণ ইংরেজি সংবাদ চ্যানেল এনডিটিভি ২৪x৭। এর বাইরে রায় ছিলেন দিল্লি স্কুল অফ ইকোনমিক্স এর সহকারি অধ্যাপক এবং ভারত সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা।
এইরকম তুখোড় প্রতিভাবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তির জীবনে কোনরকম বিতর্ক থাকবে না তা হয় না। এনডিটিভি চালু হওয়ার পরপরই সিবিআইয়ের ক্রূরদৃষ্টি গিয়ে পড়ে প্রণয় রায় সহ এনডিটিভির ওপর। এনডিটিভির পরিচালন সমিতির প্রধান প্রণয় রায়কে দূরদর্শনে সংবাদ তছরুপের দায় দোষী করা হয়। ১৯৮৮ সাল থেকে চলা মামলা সমাপ্ত হয় ২০১৩ সালে যখন প্রণয় রায় আদালতের দ্বারা দায়মুক্ত ঘোষিত হন। বিতর্কের শেষ এখানেই নয়। এরপরেও 'দ্য সানডে গার্ডিয়ান' নামক একটি পত্রিকায় এনডিটিভিকে তহবিল তছরূপের দায়ও দেওয়া হয়। যার জেরে ২০১৭ সালে সিবিআই ও এন আই এ প্রণয় রায়ের বাড়িতে অতর্কিতে রেড চালায়। এরপর থেকে সিবিআই একের পর এক টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ আনতে থাকে প্রণয় ও তার স্ত্রী রাধিকার উপরে। ২০০৪ সালের মে থেকে ২০১০ অব্দি এনডিটিভিতে যুক্ত হয়েছে বহু বেনামী সংস্থা থেকে প্রাপ্ত লক্ষ লক্ষ টাকা। তাদের উৎস আমেরিকা, হল্যাণ্ড, মরিশাস বা দুবাইয়ের বেশ কিছু অজানা সংস্থা।
সব কিছুর বাইরেও ভারতবর্ষের সংবাদ প্রেমীদের কাছে প্রণয়ের জন্য এক আলাদা জায়গা রয়েছে। দেশে নতুন ধারার ইংরেজি সংবাদ উপস্থাপনার এক অন্যধারা এনেছিলেন তিনি। উচ্চশিক্ষার ছাপ তাঁর বাচনভঙ্গিতে স্পষ্ট। তাঁর রচিত 'দ্য ভার্ডিক্ট: ডিকোডিং ইণ্ডিয়াস ইলেকশন' দেশীয় রাজনীতি এবং নির্বাচনী তথ্যের একটি উল্লেখযোগ্য প্রমাণপত্র হিসেবে রয়েছে।
ডিজাইন - 
Rajdeep Singha Roy

Comments