তথ্যের অধিকার সংক্রান্ত দিবস (Right to Information Day)

 


তথ্যের অধিকার হল মানুষের মৌলিক অধিকারগুলির মধ্যে একটি। এই অধিকারের নীতি অনুযায়ী প্রত্যেকটি মানুষ কিছু বিধিবদ্ধ ব্যতিক্রম ছাড়া বাকি পৃথিবীর যে কোনো অংশের ব্যাপারে তথ্য জানার অধিকার রাখে। তথ্যের অধিকার সংক্রান্ত আইনের গুরুত্ব বিবেচনা করে রাষ্ট্রপুঞ্জের ৭৪তম সাধারণ সভায় ২৮শে সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক তথ্যের অধিকার সংক্রান্ত দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় ২০১৬ সালে। আফ্রিকার সমাজব্যবস্থায় তথ্যের স্বচ্ছতার দাবিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই এই দিনটিকে বিশ্বজুড়ে তথ্যের অধিকার সংক্রান্ত দিবসের তকমা দেওয়া হয়।

তথ্যের অধিকার সংক্রান্ত আইনের সূচনা:
তথ্যের অধিকার আইনটি একদিনে পাস হয়নি। ১৯৪৬ সাল থেকে রেজিলিউশন নাম্বার ৫৯ পাস হয় রাষ্ট্রপুঞ্জের দ্বারা। তারপর থেকেই বেশ কয়েক বছর ধরে এই আইনের পরিবর্তন হতে হতে ২০১৬ সালের ২৪শে মার্চ অর্গানিক ল নাম্বার ৩২ অনুযায়ী তথ্যের অধিকার আইন লাগু হয়। এই আইন অনুযায়ী বলা হয় -
১. সর্বোচ্চ তথ্যের প্রকাশ করার আদেশ বা অনুমতি।
২. যিনি তথ্য প্রকাশ করবেন তার পরিচয় বা তথ্যাদির সুরক্ষা করা।
৩. কোনোরকম ভাবেই তথ্য প্রকাশে গাফিলতি না হওয়ার নজর রাখা।
৪. তথ্য প্রকাশক পুনরায় তথ্য ব্যবহারের অনুমতি পাবেন।
৫। কোনো অতিরিক্ত মূল্য ছাড়াই তথ্যাদি সংগ্রহের সুবিধা।
৬. তথ্য সুরক্ষা ও লাভের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি নেওয়া।
তথ্যের অধিকার আইনের প্রয়োজনীয়তা:
১. রাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রত্যেকটি মানুষেরই সব রকম তথ্য পাওয়ার সমানাধিকার থাকার বিশেষ কিছু সুবিধা রয়েছে।
২. দেশের প্রত্যেকটি মানুষ সকল তথ্য লাভ করার পরে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন।
৩. দেশের আর্থসামাজিক অবস্থান পরিষ্কারভাবে জানা গেলে ব্যয় ও সঞ্চয় এর হিসাব রাখতে সুবিধা হবে।
৪. একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তথ্যের স্বচ্ছতার মাধ্যমে গড়ে ওঠা সম্ভব।
ব্যতিক্রমী স্থান:
সকল নিয়মাবলীর পরেও দেশের বেশ কিছু অংশে তথ্যের অধিকার আইন পরিগণিত হয় না। যেমন -
১. তথ্যের বহিঃপ্রকাশ যদি জননিরাপত্তা, দেশের সুরক্ষা বা অপর ব্যক্তির সামাজিক বা ব্যক্তিগত সম্মানহানি ঘটায় তাহলে তা তথ্যের অধিকার আইনের বাইরে চলে আসে।
২. যে সকল ক্ষেত্র তথ্যের অধিকার আইনের বাইরে থাকে, সেই তথ্যের সুরক্ষার দায়িত্ব সরকার বা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর ওপর বর্তায়।
৩. অন্যদিকে তথ্য সংরক্ষণের আওতার মধ্যে কোনো তথ্য পড়লেও তা যদি বহিঃপ্রকাশ করা হয়, তাহলে সেটা কোনো বিশেষ ক্ষেত্রেই সম্ভব।
কোন কোন ক্ষেত্রে তথ্যের দাবি জানানো সম্ভব:
১. রাষ্ট্রীয় বা গণতান্ত্রিক সত্তার
২. রাষ্ট্রীয় বা সরকারি সত্তা
৩. জনপ্রতিনিধি গোষ্ঠী
৪. স্থানীয় কোন সংগঠন, পৌরসভা
৫. রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্ক
প্রভৃতি বেশ কিছু সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার কাছে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় তথ্যের আর্জি জানাতে পারি।
তথ্যের আইন এও জানায়, আমরা কোনো কারণ প্রকাশ না করলেও রাষ্ট্র বা কোনো সংস্থার কাছে তথ্যের আবেদন করতে সক্ষম। তথ্যে কোন ভুলভ্রান্তি থাকলে বা আকাঙ্ক্ষিত তথ্য পাওয়া না গেলেও পুনরায় লিখিত অভিযোগ জানিয়ে তথ্য প্রাপ্তির আবেদন করা যায়। সব নিয়মের পরেও আফ্রিকান নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি দল মিসা জানিয়েছে জিম্বাবুয়ের মত বেশ কিছু দেশে তথ্য সংক্রান্ত আইনের প্রচলন থাকলেও আজও সাধারণ জীবনে তার দেখা পাওয়া যায় না। কিছু বিধিবদ্ধ নিয়ম এবং তার সামাজিক প্রচলনের মধ্যে দূরত্ব ঘোচাতে অধিকারের জন্য লড়াই করে যাওয়া মানুষগুলোকে হয়তো এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে।



Comments